অসমীকরণ : সংখ্যাদের সম্পর্কের গল্প

(বাংলা মাধ্যমের প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের একটু অন্যভাবে বা অন্যরকম অঙ্কের স্বাদ দেওয়ার জন্য দশটি লেখার একটি সিরিজ তৈরি করা হয়েছে । যার নাম দশকথা । আজ দশকথার চতুর্থ কথা। এই লেখাতে আমরা অসমীকরণ ব্যাপারটি বলব । আপনাদের মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য  চিন্তা গণিত কেন্দ্রের এই উদ্যোগকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে ।)

এই সিরিজের প্রথম , দ্বিতীয় এবং তৃতীয় কথা

জ আমরা সম্পর্কের কথা বলব । আরও স্পষ্ট করে বললে সংখ্যাদের মধ্যেকার সম্পর্কের কথা বলব । শুনে অবাক হচ্ছো !! সংখ্যাদের মধ্যেকার সম্পর্ক!! আসলে তোমরা ব্যাপারটা জানো ।

আচ্ছা, এখন খানিকটা গল্প করি এসো । তুমি আর তোমার বাবার মধ্যে হল পিতা-সন্তানের সম্পর্ক। তুমি আর তোমার সহপাঠীর সম্পর্ক হল বন্ধুত্বের । জড়বস্তুদের মধ্যেও সম্পর্ক তৈরি করা যায় । এত হাসছ কেন? জড়বস্তুদের মধ্যে সম্পর্ক হয় শুনে !! নিচের ছবির দুটি পেন্সিলের দৈর্ঘ্য এক নয়, অর্থাৎ একটি অন্যটির চেয়ে দৈর্ঘ্যে ছোটো । আবার দেখো থলি ভর্তি তুলো , থলি ভর্তি পাথরের চেয়ে অনেক হালকা । আমরা একটা ব্যাপার বেশ বুঝতে পারছি যে, দুই বা ততোধিক বস্তুর মধ্য কোনো একটি ধর্মের (যেমন ছোটো না বড়, ভারী না হালকা, ভ্রাতৃত্ব না পিতৃত্ব) সাহায্যে সম্পর্ক তৈরি করা যায় ।


দুটি পেন্সিল

এইবেলা সংখ্যাদের সম্পর্কের কথা বলা যাক । কিন্তু মুশকিলটা হল, সংখ্যাদেরকে না স্কেল দিয়ে মাপা যায়, না পাড়ার মুদিখানার দোকানে ওজন করা যায় । অথচ পরিমাপের কাজে সংখ্যারা অপরিহার্য ।তাহলে সংখ্যাদের নিজেদেরক্ষেত্রে তাদের সম্পর্ক কি ভাবে প্রকাশ করা যায়? একদম !! তুমি ঠিকই ভাবছ । দুটো ১ যোগ করলে ২ হয়,তাহলে মানের হিসাবে ১, ২ এর চেয়ে ছোটো বা উল্টোভাবে বললে ২, ১ এর চেয়ে বড় । ৩ আর ৩.৫ মধ্যে তুলনা করলে বলা যায় ৩.৫ এর চেয়ে ৩ ছোটো (৩.৫=৩+০.৫)।

তোমরা এতদিন যে ধরনের সংখ্যা নিয়ে কাজ করেছ সেইগুলি সবই ধনাত্মক সংখ্যা । আরও একধরনের সংখ্যা আছে , সেগুলিকে ঋণাত্মক সংখ্যা বলে । যেমন -১, -২, -৭.৫ ইত্যাদি । তবে বলে রাখি, শূন্য(০) ঋণাত্মক বা ধনাত্মকের মধ্যে কোনটিই নয় । শূন্য যেন বাড়ির সদর দরজার মত । যে বাড়ির ভেতরের সাথে বাইরের যোগাযোগ রেখে চলেছে । অথচ সে নিজে না বাড়ির অন্দর, না বাড়ির বাহির । এই নতুন ধরণের সংখ্যাদের বুঝতে একটু অসুবিধা হচ্ছে তো ? ধরো তুমি তোমাদের পাড়ার দোকানে দু'টাকা নিয়ে চকলেট কিনতে গেলে, কিন্তু গিয়ে দেখলে চকলেটের দাম তিনটাকা হয়ে গেছে । তো তুমি একটাকা ধার রেখে চকলেট নিয়ে চলে এলে । বাড়িতে মা জিজ্ঞেস করল, আর কতটাকা জমা আছে? তুমি তো অবাক! জমা থাকবে কি ? উলটে তো ১টাকা ধার হয়ে গেছে । তুমি এই ১টাকা ধার ব্যাপারটাকেই ঘুরিয়ে বলতে পার যে -১টাকা জমা আছে ।

এই ঋণাত্মক সংখ্যাদের যোগবিয়োগ তোমাদের জানা ধনাত্মক সংখ্যাদের মতই । শুধু গুণের সময় দুটো কথা খেয়াল রেখো । দুটি ঋণাত্মক সংখ্যার গুণফল ধনাত্মক হয় । যেমন (-৩) $ \times $ (-২)=৬ । আর, একটি ঋণাত্মক ও একটি ধনাত্মক সংখ্যার গুণফল সবসমই ঋণাত্মক হয় । (-৩) $ \times $ (২)=(-৬) ।

এই ধনাত্মক পূর্ণসংখ্যা , ঋণাত্মক পূর্ণসংখ্যা , ধনাত্মক দশমিক সংখ্যা , ঋণাত্মক দশমিক সংখ্যা এবং
শূন্য - এরা একটি সংখ্যা পরিবারের সদস্য । যেই সংখ্যা পরিবারের নাম বাস্তব সংখ্যা পরিবার । যার এক একটি সদস্য হল একেকটি বাস্তব সংখ্যা ।

এবার আমরা এই বড়-ছোট সম্পর্ককে চিহ্নের সাহায্যে লিখে ফেলব । যেমন সমান বোঝাতে '=' চিহ্নটির সাহায্যে লিখে থাকি।"২, ১ এর চেয়ে বড় "- এটাকে চিহ্নের সাহায্যে লিখলে ব্যাপারটা গিয়ে দাঁড়ায় এইরকম "২>১" আর ১, ২এর চেয়ে ছোটো "১<২" । আমরা তাহলে সংখ্যাদের সম্পর্কের ব্যাপারে বলতে পারি যে, দুটি সংখ্যার মধ্যে তিন ধরণের সম্পর্ক হতে পারে
(i)প্রথম সংখ্যা > দ্বিতীয় সংখ্যা ,
(ii)প্রথম সংখ্যা < দ্বিতীয় সংখ্যা ,
(iii)প্রথম সংখ্যা = দ্বিতীয় সংখ্যা

এইখানে খেয়াল রেখো , দুটি সংখ্যার মধ্যে উপরের যেকোনো একটি-শুধুমাত্র একটিই সম্পর্ক সত্য হবে ।

এই চিহ্নগুলো অনেকসময় গুলিয়ে যায়, একটা মজার জিনিস দিয়ে খুব সহজেই মনে রাখা যায় । নিচের ছবিতে তীরের ফলার দিকে দেখো, সেটি খানিকটা আমাদের চিহ্নগুলির (<, >) মতো দেখতে । তীরের ফলার সূঁচালো দিকটি থাকে লক্ষ্যবস্তুর দিকে, আর খোলামুখ থাকে তীরন্দাজের দিকে । সাধারণত লক্ষ্যবস্তু, তীরন্দাজের চেয়ে ছোট হয় ।এই ব্যাপারটাকে মাথায় রেখে সব সময় মনে রাখবে আমাদের চিহ্নগুলির সূঁচালো দিকে থাকা সংখ্যাটি, খোলা দিকে থাকা সংখ্যাটির চেয়ে ছোট হয় আবার উল্টো ভাবে বললে বলা যায় যে, খোলা দিকে থাকা সংখ্যাটি, সূঁচালো দিকে সংখ্যাটির চেয়ে বড় হয় ।

এবার কয়েকটি উদাহরণের সাহায্যে ব্যাপারখানা বুঝে নেওয়া যাক । পাঁচজোড়া সংখ্যা নিলাম । (২,৮), (৫.৫, ৫) , (-৩,-১), (০,-৯৯) (৭, ৭)- প্রথম সংখ্যার সাপেক্ষে দ্বিতীয় সংখ্যার সম্পর্ককে চিহ্নের সাহায্যে লিখেফেলি ২<৮, ৫.৫>৫, -৩<-১, ০>-৯৯ এবং ৭=৭ । এই ঋণাত্মক সংখ্যাদের ছোটবড়-র নিয়ম ধনাত্মক সংখ্যাদের উল্টো হয় । অর্থাৎ ১, ২-এর থেকে ছোট হয় কিন্তু -১, -২-এর থেকে বড় হয় ।

এবার আমরা দুটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ধারণার কিসসা শুনব । চলো তাদের সাথে আলাপ সেরে নিই ।

তোমাকে যদি কেউ জিজ্ঞেস করে, এইতো সেদিন পলাশডাঙার মাঠে হওয়া মেলাতে কত লোক এসেছিলো ? তুমি বলবে অনেক লোক এসেছিলো। কিন্তু অনেক লোক বলতে ঠিক কতজনকে বোঝানো হচ্ছে ? আসলে ব্যাপারটা এমন নয় যে লোকের সংখ্যা আমরা গুনতে পারতাম না । সেটা ১৫০০ বা ৪৩৭৫ হোক না কেনো !! এই "অনেক লোক" ব্যাপারটাকে ইংরেজি বর্ণমালার অক্ষরগুলির সাহায্যেও বলা যায় । তখন আমরা বলব সেদিন মেলাতে x জন লোক এসেছিলো । এই x এর মান ১৫০০ বা ৪৩৭৫, যা খুশি হতে পারে । এবার মনে হতে পারে এত অক্ষর থাকতে শুধুমাত্র x কেন ? a,b,c,d,... কেনও নয়? এখানে বলি তুমি যে কোনোও অক্ষরই ব্যাবহার করতে পার ।

আর একটা হল হয় এটা নয় ওটা, কিন্তু দুটোই একসাথে নয়। ধরো তুমি আমায় বললে "রবিবার দুপুর ২টোয় বাড়িতে অথবা মামারবাড়িতে থাকব" । তোমার বলা কথা থেকে আমি বুঝতে পারলাম যে, তোমার সাথে রবিবার দুপুর ২টোয় দেখা করতে চাইলে হয় তোমার বাড়িতে যেতে হবে না হলে মামারবাড়িতে । কারণ একই সময়ে তুমি দুটো জায়গায় থাকতে পারবে না ।

এবার উপরের দুটি ধারণার সাহায্যে সংখ্যাদের সম্পর্কের গল্পটা আরও জমিয়ে বলা যাক ।দুটি সংখ্যা নাও, ধরো a এবং b 
এবার আমি বললাম a,b এর চেয়ে ছোট অথবা সমান হবে । অর্থাৎ a<b অথবা a=b। এই পুরো জিনিসটাকে একটা নতুন চিহ্ন দিয়ে লিখব। সেটা হল \( a \leq b\) ।
a,b এর চেয়ে বড় অথবা সমান হবে । অর্থাৎ a>b অথবা a=b। আর সেটাকে চিহ্ন দিয়ে প্রকাশ করতে হয় \( a \geq b\) -এই ভাবে ।

এই রে!! এত গল্প করছি কিন্তু অসমীকরণ কাকে বলে সেটাই তো বলা হয়নি । সমান-এই শব্দ থেকে এসেছে সমীকরণ কথাটি । একটি উদাহরণের সাহায্যে জিনিসটা বলি । আমি বললাম আমার কাছে দু'টি চকলেট আছে। আরও কয়েকটি চকলেট কিনলে, আমার চকলেটের সংখ্যা তোমার চকলেটের সাথে সমান হবে। তোমার কাছে ছ'টি চকলেট থাকলে, আমাকে আর ক'টি চকলেট কিনতে হবে? তাহলে আগের মতো ধরে নিই আমাকে \(x\)টি চকলেট কিনতে হবে । এর সাথে আর ২টি চকলেট যোগ করলে যোগফল হবে ৬ । পুরো জিনিসটাকে আমরা এইভাবে লিখতে পারি x+২=৬ । এই শেষের বিস্তৃতিকেই সমীকরণ বলে । আর যেখানে সমান(=) চিহ্নের পরিবর্তে <,> , ≤ এবং ≥ ব্যাবহার করা হয়, সেই বিস্তৃতি কে অসমীকরণ বলে ।

এবার আমরা অসমীকরণের কয়েকটি বিশেষ ধর্ম জানব ।

(i) ধরা যাক \(x,y,z\) তিনটি বাস্তব সংখ্যা এবং \(x \leq y\) , তাহলে আমরা
বলতে পারি “\(x+z \leq y+z\)”- এই সম্পর্কটি সত্য |
(ii) ধরা যাক \(x,y ,z(z>0)\) তিনটি বাস্তব সংখ্যা এবং \( x \leq y\), তাহলে আমরা বলতে পারি “\( x \times z \leq y \times z\)”- এই সম্পর্কটি সত্য |
(iii)ধরা যাক \(x,y ,z(z<0)\) তিনটি বাস্তব সংখ্যা এবং যদি \( x \leq y\) , তাহলে আমরা বলতে পারি “ \( x \times z \geq y \times z\) ”- এই সম্পর্কটি সত্য |
(iv)ধরা যাক \(x,y,z\) তিনটি বাস্তব সংখ্যা এবং যদি \( x \leq y\) এবং \(y \leq z\) হয়,
তাহলে আমরা বলতে পারি “\(x \leq z\)” এই সম্পর্কটি সত্য |

একটি বিশেষ ধরনের অসমীকরণ

যদি x,y দুটি ধনাত্মক বাস্তব সংখ্যা হয় তাহলে, \( \frac{x+y}{2} \geq \sqrt{xy} \)

\(\sqrt{} \) চিহ্নটি হল বর্গমূলের । এটাকে অনেকটা ল্যাম্পপোস্টের মতো ভাবতে পার । তুমি যখন রাতেরবেলা ল্যাম্পপোস্টের নিচে হাঁটতে থাক, তখন তোমার সাথে তোমার ছায়াও থাকে । কিন্তু আসলে তো একটাই মানুষ । সেই রকমই বর্গমূলের চিহ্নের ভেতরে দুটো একই সংখ্যা থাকলে, বর্গমূলের চিহ্নটি তুলে দিয়ে একটি সংখ্যা লিখতে হয়। যেমন \(\sqrt{১৬} = \sqrt{৪ \times ৪}=৪ \) আবার \(\sqrt{২৫} = \sqrt{৫ \times ৫}=৫ \) । এখানে একটা কথা বলে রাখি, যেই সংখ্যার বর্গমূল বের করবে , সেটিকে মৌলিক উৎপাদকের গুণফল আকারে প্রকাশ করবে। দেখবে কাজটা অনেক সহজ হয়ে যাবে । ধরো ১০০ র বর্গমুল বের করতে হবে , তখন \(\sqrt{১০০} =\) \( \sqrt{২ \times ২ \times ৫ \times ৫}=২ \times ৫=১০ \) ।

চেনা সমস্যার অচেনা সমাধান

উধো আর বুধো ঠিক করল, তারা ৩৬ বর্গমিটার জায়গাবিশিষ্ট আয়তকার (দৈর্ঘ্য≠প্রস্থ) জমিতে বেড়া দিবে । তারা ঠিক করলো ১/৪ অংশে বেড়া দেবে না, তো উধো আর বুধো পরিসীমার ১/৪ অংশ মাপতে শুরু করল । উধোর হিসেবে দাঁড়াল ৬.৫ মিটার, আর বুধোর হিসেবে ৫.৬ মিটার । এই হিসেব শুনে শ্রী কাক্কেশ্বর কুচকুচ বলল নিশ্চয় উধোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চেপেছে, তোরা কেউ একটা ভুল করেছিস হিসেবে । এখন তোমরা বলো কে হিসাবে ভুল করেছে?

চিন্তাসুত্র ১

ধরে নাও জমিটির দৈর্ঘ্য \(x\) মিটার, \(y\) মিটার, তাহলে পরিসীমা \(2(x+y)\) মিটার এবং ক্ষেত্রফল \(xy\) বর্গমিটার ।

চিন্তাসুত্র ২

আমাদের বিশেষ অসমীকরণ এখানে খুব কাজের ।

চিন্তাসুত্র ৩

পরিসীমার ১/৪ অংশ মানেই তো \(\ \frac{x+y}{2}\)

বহুভুজ :বন্ধুদের বিন্দু ভেবে দেখি


বাংলা মাধ্যমের প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের একটু অন্যভাবে বা অন্যরকম অঙ্কের স্বাদ দেওয়ার জন্য দশটি লেখার একটি সিরিজ তৈরি করা হয়েছে । যার নাম দশকথা । আজ দশকথার তৃতীয় কথা। এই লেখাতে আমরা বহুভুজের ব্যাপারটি বলব । আপনাদের মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য  চিন্তা গণিত কেন্দ্রের এই উদ্যোগকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে ।)


এই সিরিজের প্রথম এবং দ্বিতীয় কথা

ভাবো তুমি খেলার মাঠে একা দাঁড়িয়ে । এখন এই ব্যাপারটি তুমি খাতায় এঁকে ফেলো । কি মনে হচ্ছে খুব কঠিন কাজ? মোটেই না! তোমার পেন্সিল দিয়ে খাতায় একটি বিন্দু এঁকে ফেলো । এবার ওই বিন্দুটির নাম দাও, নাহলে বুঝবে কি করে ওটা তুমি | কি নাম দেবে? আচ্ছা নাম দাও ‘আমি’ । নীচের ছবির সাথে একবার মিলিয়ে নাও ।

এবার ভাবো তুমি ও তোমার বন্ধু দাঁড়িয়ে আছো। এই ব্যাপারটা খাতার মাঠে এঁকে ফেলো। খাতার মাঠ? অদ্ভুত লাগছে শুনতে? আসলে আমাদের খাতার একটি পৃষ্ঠাকেই তো মাঠ বলে ভেবে নিয়েছি, না হলে খেলার মাঠের সমান অত্ত বড় পৃষ্ঠা পাবো কোথায়?  তুমি আর তোমার বন্ধুকে বিন্দু হিসাবে এঁকে ফেলো। বিন্দুদুটির নাম দাও। দুটি বিন্দুকে একটি রাস্তা দিয়ে জুড়ে দাও। নীচের ছবিদুটির সাথে একবার মিলিয়ে নাও ।

হঠাৎ করে তোমাদের এক বন্ধু তোমাদের সাথে যোগ দিল। সে তোমাদের সাথে সোজাসুজি না দাঁড়িয়ে এমনভাবে দাঁড়াল যাতে তোমার থেকে সে যত পা দূরে দাঁড়িয়ে, তোমার  আগের বন্ধুর থেকে সে ঠিক তত পা দূরে দাঁড়িয়ে।

তোমাদের তিন বন্ধুকে আবার আগের মত  বিন্দু হিসাবে এঁকে ফেলো। বিন্দুতিনটির নাম দাও। বিন্দুতিনটিকে একে অপরের সাথে রাস্তা দিয়ে জুড়ে দাও । নীচের ছবিগুলি লক্ষ্য কর, প্রথম ছবিটির মত বিন্দুগুলি নিলে হবে না ।

এই খেলা দেখতে পেয়ে এক বন্ধু তোমাদের সাথে যোগ দিল | তোমরা এখন মোট চার বন্ধু হলে | এখন নতুন বন্ধু তোমার দ্বিতীয়  বন্ধুর সাথে একই রেখায় দাঁড়াল | আগের মত বিন্দু হিসাবে এঁকে ফেলো | বিন্দুচারটির নাম দাও | বিন্দুচারটিকে চারটি রাস্তা দিয়ে জুড়ে দাও | নীচের ছবিগুলি লক্ষ্য কর |

তোমরা শুনেছ দুগ্গা ঠাকুরকে দশভুজা বলে । কেনো বলে জানো? ভুজ মানে হাত- এবার বুঝতেই পারছ দশভুজা কেনো বলে ।

আমাদের বানানো ছবিগুলোরও হাত বা বাহু আছে । ওমা ! হাসছো কেনো? ভাবছো পরোটা, চৌকো মতন জিনিসগুলোর হাত? আসলে এখানে বাহু বলতে এক একটা রাস্তাকে বোঝানো হয়েছে । বন্ধুদের সংখ্যা তিন বা তিনের বেশি হয়ে যাওয়ার সময় থেকে ছবিগুলি খেয়াল করলে দেখতে পাবে কিছুটা জায়গা রাস্তা বা বাহুগুলি দিয়ে ঘেরা আছে । এই ছবিগুলিকে বহুভুজ বলে ।

তিন বন্ধু যখন দাঁড়িয়েছিলে ,তখন একটি বহুভুজটি তৈরি হয়েছিলো । ওই বহুভুজটিকে বলা হয় ত্রিভুজ । কারণ এর তিনটি বাহু আছে । চারজনের ক্ষেত্রে তৈরি হওয়া বহুভুজকে বলে চতুর্ভুজ।

হঠাৎ করে দেখলে এই খেলায় তোমাদের স্যার ও যোগ দিয়েছে। তাহলে তোমরা মোট পাঁচজন হলে। এখন আগের মত পাঁচজনকে বিন্দু হিসাবে ভাবো। তাদেরকে পাঁচটি রাস্তা দিয়ে জুড়লে ছবিটি কেমন হবে? আর নতুন বহুভুজটিকে কি নামে ডাকবে?

জাদু বর্গ

(বাংলা মাধ্যমের প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের একটু অন্যভাবে বা অন্যরকম অঙ্কের স্বাদ দেওয়ার জন্য দশটি লেখার একটি সিরিজ তৈরি করা হয়েছে । যার নাম দশকথা । আজ দশকথার দ্বিতীয় কথা। এই লেখাতে আমরা ম্যাজিক স্কয়ার ব্যাপারটি বলব । আপনাদের মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য  চিন্তা গণিত কেন্দ্রের এই উদ্যোগকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে ।)

এই সিরিজের প্রথম কথা

ক্যাডবেরি খেতে তোমার কেমন লাগে? অন্য চকোলেটদের চেয়ে ক্যাডবেরি দেখতেও একটু অন্যরকম, তাই না !

প্রত্যেকটা খোপ বর্গাকার এবং একই রকমের দেখতে । এই খোপগুলোতে সংখ্যা বসিয়ে একটা দারুণ খেলা দেখানো যায় । এই রে! ভাবছ ক্যাডবেরিতে সংখ্যা বসিয়ে দিলে ওটা তো আর খাওয়া যাবে না । ঠিক আছে, তাহলে ক্যাডবেরিটা খেয়েই নাও । আমরা বরং খাতা-কলমে খেলাটা খেলি।

প্রথমে আমি তোমাকে খেলাটা দেখাই । নিচের ছবির মত একটা বর্গাকার ছক খাতায় এঁকে ফেলো।

এখানে মোট ৯ টি খোপ রয়েছে । এবার আমাদের ১ থেকে ৯ পর্যন্ত সংখ্যাগুলিকে এমনভাবে বসাতে হবে যাতে খোপগুলিতে বসানো সংখ্যাদের সোজাসুজি(উল্লম্বভাবে),পাশাপাশি(অনুভূমিকভাবে) এবং কোণাকুণি(কর্ণ বরাবর) যোগফল সমান হয় । অনুভূমিকভাবে থাকা খোপগুলিকে সারি এবং উল্লম্বভাবে থাকা খোপগুলিকে স্তম্ভ বলা হয় ।

এই খেলার আর একটা নিয়ম আছে, তুমি কোনও সংখ্যাকে একবারই ব্যাবহার করতে পার ।

এই জিনিসটার খুব সুন্দর একটা নাম আছে- জাদু বর্গ । এইবার দ্যাখো খেলার খেলার নিয়ম মেনে  ১ থেকে ৯ পর্যন্ত সংখ্যাগুলিকে একবারই ব্যাবহার করে  সোজাসুজি, পাশাপাশি এবং কোণাকুণি যোগফল ১৫ পেয়েছি । এই ১৫ কে বলা হয় জাদু ধ্রুবক

ধ্রুবক ব্যাপারটা বুঝলে না তো ?

বছরের যে সময়েই দ্যাখো না কেন দেখবে রাতের আকাশে ধ্রুবতারা একই জায়গাতে রয়েছে । অর্থাৎ সন্ধ্যাতারা বা শুকতারা যেমন বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে দেখতে পাওয়া যাই, ধ্রুবতারা কিন্তু সারা বছরজুড়ে একই  অবস্থানে দেখতে পাওয়া যায় । সেইরকমই জাদু বর্গের সোজাসুজি, পাশাপাশি এবং কোণাকুণি যোগফল ধ্রুবতারার মতো স্থির অর্থাৎ একই হয় ।

আমার দেখানো জাদু বর্গকে বলে ৩x৩ ক্রমের জাদু বর্গ | এই  “৩x৩ ক্রম” ব্যাপারটি বুঝিয়ে বলা যাক | এখানে দ্যাখো ৩ টি সারি এবং ৩ টি স্তম্ভ আছে | এই ব্যাপারটাকেই ৩x৩ ক্রম বলে । এটার সাহায্যে আমরা বলে দিতে পারি মোট ক’টা খোপ আছে - যেমন ৩x৩ ক্রমের জাদু বর্গে ৯ টি খোপ থাকে । এই ৯ টি খোপে প্রথম  ৯ টি স্বাভাবিক সংখ্যাকেই (১,২,৩,৪,৫,৬,৭,৮, ৯) ব্যাবহার করেছি |

জাদু বর্গের আরেকটি জাদু ব্যাপার হল, “উল্টে দেখুন একই আছি” , অর্থাৎ স্তম্ভ বরাবর সংখ্যাগুলিকে সারি বরাবর লিখলেও নতুন বর্গটিও জাদু বর্গ হয় । জাদু ধ্রুবক একই থাকে ।

এবার দ্যাখ ৩x৩ ক্রম জাদু বর্গের জাদু ধ্রুবক ১৫, কিন্তু ৪x৪, ৫x৫  ক্রমের জাদু ধ্রুবকও কি ১৫ হবে?

জাদু ধ্রুবক সব ক্রমের জন্যে একই হয় না । জাদু ধ্রুবক নির্ণয় করার একটা কৌশল আছে । এইখানে একটা জিনিস খেয়াল করার মতো , সেটা হল জাদু বর্গে যতগুলি সারি থাকে ঠিক ততগুলিই স্তম্ভ থাকে । যেমন আমার দ্যাখানো জাদু বর্গে  ৩ টি সারি আর ৩ টি স্তম্ভ আছে । কিন্তু ৩ টি সারি আর ৪ টি স্তম্ভবিশিষ্ট জাদু বর্গ বানানো সম্ভব নয় । অর্থাৎ সারির সংখ্যা ও স্তম্ভের সংখ্যা সমান না হলে জাদু বর্গ তৈরি করা  সম্ভব নয় । কারণটা তুমিই খুঁজে দেখো । আমি একটা ছোট্ট সুত্র দিই কারনটা খোঁজার জন্যে । জাদু বর্গ - এই “বর্গ” শব্দের মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে কারনটা ।

এবার  জাদু ধ্রুবক বের করার কৌশলটি বলি ।

দেখবে তাহলেই জাদু ধ্রুবক পেয়ে যাবে ।

৩x৩ ক্রমের জন্যে জাদু ধ্রুবকের মান ১৫ হচ্ছে কিনা একবার পরখ করে দেখ ।

এই ধরণের জাদু বর্গকে সাধারণ জাদু বর্গ  বলে । এবার তোমরা ৪x৪ ক্রমের সাধারণ জাদু বর্গ বানানোর চেষ্টা করো ।

এবার তোমাকে “জন্মদিনের জাদু বর্গ ”-এর কথা বলব । আমাদের দেশের বিখ্যাত গণিতজ্ঞ শ্রীনিবাস রামানুজন তাঁর নিজের জন্মদিন দিয়ে এই জাদু বর্গ বানিয়েছিলেন। এই জাদু বর্গ সব সময় ৪x৪ ক্রমের হয় ।

রামানুজনের জন্মদিন হল ২২-১২-১৮৮৭(২২ শে ডিসেম্বর, ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দ ) |

এখানে দ্যাখো, সারি,স্তম্ভ, কর্ণ বরাবর যোগফল ১৩৯|শুধু তাই নয়,নিচের ছবিগুলি লক্ষ্য কর, চারটি ক্ষেত্রেই রঙিন অংশগুলির যোগফলও ১৩৯ ।

এখানে আর একটি ব্যাপার লক্ষ্য করার, সাধারণ জাদু বর্গের মতো নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে সংখ্যা নেওয়া হয়নি অর্থাৎ ৩x৩ ক্রমের জন্যে ১ থেকে ৯ পর্যন্ত নেওয়া হয়েছিল- এইক্ষেত্রে সেইসব বাধানিষেধ নেই । শুধু খেয়াল রেখো কোনো সংখ্যা দু’বার ব্যবহার করা যাবে না ।

এবার তুমি নিজের জন্মদিনের জাদু বর্গ বানিয়ে পাঠিয়ে দাও ।

প্রথমে জাদু ধ্রুবক বের করে নাও । যেমন  রামানুজনের জন্মদিনের জাদু বর্গের জাদু ধ্রুবক হল ১৩৯ (২২+১২+১৮+৮৭=১৩৯) । তারপর প্রথম সারির চারটি খোপে দিন-মাস-শতক-বছর(উদাঃ ২২-১২-১৮-৮৭) বসিয়ে দাও । তারপর জাদু বর্গ বানিয়ে নাও ।  

আয়নাবাজি

(বাংলা মাধ্যমের প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের একটু অন্যভাবে বা অন্যরকম অঙ্কের স্বাদ দেওয়ার জন্য দশটি লেখার একটি সিরিজ তৈরি করা হয়েছে । যার নাম দশকথা । আজ দশকথার প্রথম কথা। এই লেখাতে আমরা দর্পণ প্রতিসাম্যতা ব্যাপারটি বলব । আপনাদের মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য  চিন্তা গণিত কেন্দ্রের এই উদ্যোগকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে ।)

নেকদিন আগে এক রাজকুমারী ছিল | তাঁর মনে ভারী দুঃখ ছিল | সে রাজা, গজা, মন্ত্রী, সান্ত্রী সব্বাইকে দেখতে পেলেও, সে যে নিজে কেমন দেখতে তাই কোনোদিন দেখেনি |

ওমা! তুমিও কি একই কথা চিন্তা করছ? অন্য সবাই কে দেখতে পেলেও নিজেকে দেখতে পাও না?

রাজকুমারী পড়েছে মহা সমস্যায় | দিন যায়, রাত যায়- সে ওই একই কথা চিন্তা করতে থাকে | এমন সময় এক দূরদেশের ব্যবসায়ী ওই দেশে এসেছিল | সে লোকের মুখে রাজকুমারীর এই সমস্যার কথা শুনল | এর কিছুদিন পরে সে রাজদরবারে গিয়ে জানাল, তাঁর কাছে এমন এক অদ্ভুত জিনিস আছে যা দিয়ে নিজেকে দেখা যায় |

তোমরা বলতে পারবে জিনিসটা কি?---

 একদম ঠিকই ধরেছো, "আয়না" | আয়নাতে আমরা নিজেদেরকে দেখতে পাই | এদিকে রাজকুমারী তো আয়না নিয়ে ভারী খুশি | কিন্তু তাতেও সে একটা ছোট্ট মুশকিলে পড়ে গেল| আয়নাতে সব কিছু কেমন উল্টো উল্টো লাগছে ।

কি হল? তোমরা কিছু ভাবছ কি ?

ওহো ! বুঝতে পেরেছি ওই “উল্টো উল্টো” ব্যাপারটা  নিয়ে ভাবছ তো? তোমরা হয়ত অনেকেই আয়নাতে নিজেদেরকে দেখে থাকবে  এখন যারা দেখছ তারা হয়ত ভাবছ কই, কিছু উল্টোয় না তো ! একই থাকে!

কিন্তু আমাদের রাজকুমারী যে উল্টো উল্টো দেখছে বলল? তাহলে কি সে ভুল দেখছে?

আসলে উল্টে যাওয়া বলতে কিন্ত পড়ে যাওয়া নয় নীচের ছবিগুলি লক্ষ্য করো

প্রথম ছবির হনুমান যদি আয়নায় নিজেকে দেখে,  সে কিন্তু দ্বিতীয় ছবির মত উল্টোনো হনুমান দেখবে না |

তোমরা একটা  আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়াবে, দেখবে তোমার ডান হাত , আয়নাতে দেখতে পাওয়া তুমির বাম হাত হয়ে গেছে|  

বুঝবে কি করে ?

আচ্ছা, তুমি ডানহাতে একটা পেন্সিল নাও | এখন দেখবে আয়নাতে পাওয়া তুমির বাম হাতে পেন্সিল আছে |

আর একটা পরীক্ষা করে দেখতে পারো |  তোমরা প্রত্যেকে একটা কাগজে নাম লেখো| এইবার আয়নার সামনে গিয়ে ওই লেখাটা ধরো দেখবে অক্ষরগুলো কেমন উল্টেপাল্টে গেছে |

ব্যাপারটা হল গিয়ে, ছিল রুমাল হয়ে গেল বেড়াল!!

আমরা এই খেলাটার নাম দিলাম আয়নাবাজি |

এইবার তোমরা নিজেদেরকে রাজা রাণীর মতো ভাবতেই পারো | আমি জানি, আসলে তো তোমরা তাই-ই...

এইবার তোমরা আয়না না দেখে বল তো, নীচের দেওয়া ইংরাজী অক্ষরগুলির মধ্যে কোনগুলি আয়নাবাজিতে উল্টে যাবে ? আর কোনগুলি একইরকম থেকে যাবে ?

B,  O, G, U, R, D, H, K